সর্বশেষআঞ্চলিক

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর শয্যায় বাসচালক লাভলু

চর্মরোগের চিকিৎসা নিয়ে বাসচালক লাভলু রহমান (৪৫) এখন মৃত্যুশয্যায়। হাতুরে চিকিৎসক হযরত আলীর পুশ করা পেনিসিলিন গুরুপের বেঞ্জাপেন ইনজেকশানে রোগীর শরীরে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

চিকিৎসা

শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঘা-পচড়া। টানা ২০ দিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আছেন লাভলু।গুরুত্বর আসুস্থ বাসচালক লাভলু রহমানের বাড়ি গুরুদাসপুর পৌর শহরের খামারনাচকৈড় গ্রামে। তিনি পেশায় বাসচালক। নিজেকে প্রার্থী চিকিৎসক দাবি করা হযরত আলী পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারে খুলেছেন চিকিৎসালয়।

স্থানীয়রা জানান, শুধু লাভলু রহমান নন। নামধারী এই চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন প্রসূতি-নবজাতক শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। সেখানেই তিনি দিচ্ছেন নাক-কান-গলাসহ সর্বরোগের নানীবিদ চিকিৎসা। দীর্ঘদিন ধরে হযরত আলী এভাবে অপচিকিৎসা দিলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

অসুস্থ রোগী লাভলু রহমানের ভাই সাসুল হক ইতেফাককে জানান, অবস্থা বেগতিক হওয়ায় বড় ভাই লাভলুকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার নন্দিতা পাল চিকিৎসা দিচ্ছেন। লাভলুর শারীরিক অবস্থার এখনো তেমন উন্নতি হয়নি। তিনি বলেন, চর্মরোগের সমস্য নিয়ে ২২ অক্টোবর হযরত আলীর কাছে পরামর্শ চাইতে গিয়েছিলেন তার ভাই বাসচালক লাভলু।

চিকিৎসা

সে সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই ডাক্তার সরূপ পেনিসিলিন গুরুপের বেলাপেন ইনজেকশান পুশ করেন হযরত আলী। সেদিন রাতেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রীয়া দেখা দেয়। পার্শ্বপ্রতিক্রীয়ার পর ২৪ অক্টোবর পূণরায় ইনজেকশানের দ্বিতীয় ডোজ পুশ করা হয়। এরপর থেকে বের হতে থাকে ফোসা। ক্রমেই শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ঘা-পুচরা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরামর্শে প্রথমে রাজশাহী নেওয়া হয় লাভলুকে। অবস্থার অবনতি হলে ৩১ অক্টোর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসা চলছে।

বেঞ্জাপেন ইনজেকশান ব্যবহারে চিকিৎসা সান্ত্র বলছে, বোপেন মূলত পেনিসিলিন গ্‌রুপের এন্টিবায়োটিক ইনজেকশান। এটি মাংসে ব্যবহার করতে হয়। রোগীর শরীরের জন্য ইনজেকশানটি উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করতে মাংস পেশিতে স্বল্প পরিমাপে পুশ করার নিয়োম রয়েছে। পরীক্ষার পর ডোজ আকারে এই বোপেন ইনজেকশানটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মুজাহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া গ্রাম্য বা প্যারামেডিকেল ডাক্তার বৈঞ্জার্পেন ইনজেকশান লিখতে বা রোগীর শরীরে পুশ করতে পারবেন না। কিন্তু সরকারি এই নিয়োম অমান্য করে চিকিৎসক নামধারী এক ব্যক্তি রোগীর শরীরে বেঞ্জাপেন ইনজেকশান পুশ করেছেন।

চিকিৎসা

তিনি বলেন, গত মাসের শেষের দিকে গুরুত্বর অসুস্থ্য অবস্থায় বাসচালক লাভলু তার কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সরেজমিনে শনিবার সন্ধ্যায় ডিগ্রিহীন ডাক্তার হযরত আলীর চিকিৎসালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চাঁচকৈড় দুধবাজারে মাস্টার ফার্মেসি নামের একটি ওষুধ বিক্রির দোকান রয়েছে তার। দোকানের ভেতরেই রয়েছে হযরত আলীর রোগী দেখার চেম্বার। সেখানে কয়েকটি শয্যাও রয়েছে। এসময় খসরা কাগজে রোগীদের সব ধরণের চিকিৎসা দিতে দেখা যায় হযরত আলীকে।

নিজেকে গ্রাম্য ডাক্তার দাবি করা হযরত আলী ইত্তেফাককে বলেন, চিকিৎসক হিসেবে তার সনদ আছে কি না, তিনি সাংবাদিকদের দেখা রাজি নন। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মুজাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, এই ধরণের ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই অভিযান দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button