সর্বশেষবিশেষ

চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

ডায়রিয়া নিউমোনিয়া চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, আইনজীবী ইসরাত জাহানের ১৮ মাসের মেয়ে ইরিনার পাঁচ দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত

আক্রান্ত

তিন দিন বাড়িতে মেয়ের চিকিত্সা করেন তিনি, কিন্তু কোনোমতেই পাতলা পায়খানা কমছিল না।দিনে ১০/১২ বারের বেশিও পায়খানা হয়।পরে উপায়ন্তর না দেখে মেয়েকে তিনি ভর্তি করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসি)। রায়েরবাগ থেকে আসা ইসরাত জাহান জানান, মেয়েকে তিনি কোনো বাইরের খাবার দেন না। তারপর কীভাবে যে কি হলো তা তার বোধগম্য নয়।

মো. রফিকুল ইসলাম ও হাফসা সুলতানার চার মাসের সন্তান আরিয়ান ঠান্ডা কাশি, জ্বর, অপুষ্টি আর চর্ম রোগ নিয়ে ভর্তি আছেন ডিএমসির শিশু ওয়ার্ডে, তার অবস্থা গুরুতর। প্রতি মিনিটে তাকে ছয় লিটার অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। চিকিত্সক জানান, তাকে আইসিইউতে দিতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু তাদের এখন আইসিইউর কোনো শয্যা খালি নেই।

গত বৃহস্পতিবার দেশের অন্যতম টার্সিয়ারি (অন্য যে কোনো হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা রোগী ভর্তির সুবিধা) হাসপাতাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল শীত আসার আগে সেখানে ঋতুবাহিত রোগে আক্রান্ত শিশুর ভিড় বাড়ছে। অবস্থা এমন যে প্রতিটি সিটে দুই থেকে চার জন রোগী তো আছেই, এমনকি মেঝেতেও রোগী রাখার জায়গা নেই।

ডায়রিয়া নিউমোনিয়া চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে:

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, শীত আসার আগে এবং শীত যাওয়ার পরে ঋতুবাহিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ে এখানে। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী অন্যতম সংক্রামক রোগ নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে এই সময়ে। দেশে শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাপে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় প্রতি বছর হাঁজারে ২২ থেকে ২৫ জন শিশু মারা যায়। অবস্থার উন্নয়নে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো, নির্ধারিত ভ্যাকসিন প্রদান সম্পন্ন করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ ১৯ সিটে ৬৫ রোগী: ২০১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে ছেলেকে নিয়ে আছেন আসমা আক্তার (২৫)। কয়েক দিন ধরে ছেলের পাতলা পায়খানা হচ্ছিল, পরে কাশি ও জ্বর আসলে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। ছেলের অবস্থা এখন একটু ভালো।

হাফসা একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। সন্তানকে তার দাদির কাছেই রেখে যেতেন। হঠাত্ করে শিশুটির শরীরে র্যাশ হয়ে চামড়া উঠতে থাকে। আক্রান্ত পরে সর্দিকাশি হয়ে শিশুর অবস্থা খারাপের দিকে যায়। কর্তব্যরত চিকিত্সক ডা. আফরোজা সুলতানা জানান, শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছিল। তাকে মায়ের দুধ না খাইয়ে কোটার দুধ খাওয়ালে তার অপুষ্টি বেড়ে যায়, তার নিউমোনিয়াও আছে সবকিছু মিলে তাঁর অবস্থা ভালো না।

ডা. আফরোজা সুলতানা জানান, তাদের সাতটি শিশু ইউনিটে প্রতিদিনই এমন দুই একটি শিশু অপুষ্টিজনিত ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হয়। বেশির ভাগ বাবা-মা শিশুকে কীভাবে লালন-পালন করতে হবে তা জানেন না, তারা সন্তানের অসুখ হলে ডাক্তার না দেখিয়ে ফার্মেসি থেকে যেন-তেন ওষুধ এনে শিশুকে যাওয়ান। ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তাদের অন্য উপসর্গ দেখা দেয়।

হাসপাতালের ইউনিট দুইয়ের ইনচার্জ-অধ্যাপক লুৎফন নেসা জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউট ডোরে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ শিশু রোগী চিকিত্সা নিতে আসে। আক্রান্ত সর্দি কাশি, জ্বর, পাতলা পায়খানা ও চর্ম রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি আসে। আউট ডোরের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গুরুতর অবস্থায় এলে তাকে ভর্তি করতে হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীর সংখ্য এত বেশি থাকে যে, আমরা এক বেডে দুই জন/তিন জন্য চার জন রোগী রেখেও সামাল দিতে পারি না।

পরে তাদের মেঝেতে ও বারান্দায় রাখতে হয়। তার ইউনিটে ১৯টি সিটে ৫৬ রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের অবস্থা বেশি গুরুতর বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, হাসপাতালে এনআইসিইউতে ২০টি শয্যা আছে, সবগুলোই বর্তমানে পূর্ণ। আইসিইউতে অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে ৮-১০ জন। আর এনআইসিইউর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ফারজিনা ইসলাম জানান, তাদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীরা বেশি গুরুতর

অবস্থায় থাকে। অনেক সময় এত খারাপ অবস্থা হয় যে, তাদের কিছু করার থকে না। বর্তমানে আট জন শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি আছে।

বাড়াতে হবে চিকিৎসার সুযোগ ও সচেতনতা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ইত্তেফাককে বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় অভিভাবকের সচেতনতা বৃদ্ধি, ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং ছয় মাস পরে নিয়ম অনুযায়ী, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর সঙ্গে সব টিকা নেওয়া হলে শিশুদের ঋতুবাহিত রোগের ঝুঁকি কমবে। তিনি বলেন, দেশের এনআইসিইউ ও পিআইসিইউর সুবিধা খুব কম। যথাযথ পরিবেশে এত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই আমাদের বাড়াতে হবে চিকিত্সার সুযোগ ও সচেতনতা।

আরও পড়ুন

রক্ত ​​আমাশয় জটিল হতে পারে?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button