বিশেষসর্বশেষ

আসামির খাবারের টাকা যাচ্ছে পুলিশের পকেটে -চট্টগ্রাম কারাগার

আমি কিছু খাইনি। পারলে খাবারের টাকা নিয়ে আসুন। চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার পুলিশের হাতে মারধরের মামলার আসামি সৈয়দ আলাউদ্দিন গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে চট্টগ্রাম আদালতের মহানগর কারাগারের ভেতর থেকে পুলিশ কনস্টেবল আবদুল কাইয়ুমকে তিনি এ কথা বলেন। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে ক্ষুধার্ত আলাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।

খাবারের টাকা

শুধু সৈয়দ আলাউদ্দিনই নয়, গ্রেপ্তারের পর আদালতে আসা আসামিরাও সরকারের বরাদ্দ দুপুরের খাবার না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত মাটিতে কমপক্ষে ৫২ অভিযুক্ত এবং তাদের আত্মীয়দের সাথে কথা বললে তারা নিশ্চিত করেছেন যে তারা খাবার পাচ্ছেন না।

কারাগারে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অথচ প্রতি মাসেই সরকারি কোষাগার থেকে আসামিদের নামে খাবারের টাকা তোলা হচ্ছে। গত আড়াই বছরে (২০২১ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত) আসামিদের মধ্যাহ্নভোজের (খোরাকি) জন্য সরকারি কোষাগার থেকে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা তোলা হয়েছে।

আমি জানি একটি সরকারী বরাদ্দ আছে. থানা থেকে প্রতিদিন অনেক আসামি আসে। তাদের সাথে কথা বল. কিন্তু কাউকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সরকারের বরাদ্দের টাকায় দুপুরের খাবার খেতে দেখিনি। তিনি খবরের অন্তরাল কে বলেন, উল্টো আসামিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এবং খাবার পাঠাতে পুলিশকে খাবারের টাকা দিতে হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মহানগর কারাগারে দুপুরের খাবার দেওয়া হয় কি না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি আইনজীবী মো. আবদুর রশিদ খবরের অন্তরাল কে বলেন, “আমি জানি সরকারি বরাদ্দ আছে। প্রতিদিন থানা থেকে অনেক আসামি আসে। তাদের সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু কাউকে খাবার দেওয়া হয় না।

সরেজমিনে আসামিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলে আসার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা খাবারের টাকা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের খাবার পাঠাতে পারে। মিটিংয়ের জন্য ১০০থেকে ১৫০ টাকা, সকালের নাস্তার জন্য ১০০ টাকা এবং দুপুরের খাবারের জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর যাদের স্বজনরা আসে না তাদের না খেয়ে জেলে যেতে হয়।

না খেয়ে জেলে যাওয়া সৈয়দ আলাউদ্দিন ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশের উপস্থিতিতে www.khoborerontorale.com বলেন, পুলিশ যখন তাকে ধরে তখন তার পকেটে ২০০ টাকা ছিল। তাদের সঙ্গে চা-সিগারেটও নিয়ে গেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর রাতে পুলিশ খাবার দেয়। সকালে আদালত কক্ষে আসার পর থেকে আমার মুখে একটি দাগও পড়েনি। তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তার সাথে দেখা করতে আসতে পারেননি। পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল কাইয়ুমকে অনুরোধ করলেন বাইরে থেকে কিছু খাবার আনতে পারলে। কিন্তু খাবারের টাকা দিতে না পারায় তারা খাবার পাননি।

আসামিদের খাবারের বিল প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর দফতর) আবদুল ওয়ারিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি খবরের অন্তরাল কে বলেন, বর্তমানে থানা ও আদালতের কারাগারে আসামিদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ১৫০ টাকা। একদিনের জন্য বরাদ্দ ৭৫ টাকা। বিল হাতে পেলে তাৎক্ষণিকভাবে থানা ও আদালতে টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু একজন আসামি খাবারের জন্য ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা বিল করেছেন শুনে তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, দেড়শ টাকার অর্ধেক ৭৫ টাকা। ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা কেন? তিনি বিষয়টি দেখবেন।

আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত) আতিকুর রহমান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতের জেল বিল তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে, একজন আসামির জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ১৫০টাকার অর্ধেক খাবারের বিল ৭৫ টাকা ধরা হয়। কিন্তু ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা বিল কেন দেওয়া হয়? এ বিষয়ে তিনি www.khoborerontorale.com কে বলেন, আগে যেভাবে করা হয়েছে, সেভাবেই করা হয়েছে। ৩৭ টাকা ৫০ পয়সায় একজনকে কী খাবার দেওয়া হলো? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুই দেওয়া হয়নি। খাবারের টাকা গেল কার পকেটে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে জানা যাবে কী কী বিল থাকত।

খাবারের টাকা

কামরুল হাসান ২০২১ সালের আগস্ট থেকে চলতি মাসের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আসামিদের খাবার দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি www.khoborerontorale.com বলেন, ‘আসামিদের খাবার ও বিলের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’ এদিকে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুরু করা হয়েছে। চাকরিজীবনের শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত কামরুল হাসান কত টাকা বেতন-ভাতা পেয়েছেন, তার হিসাব চেয়ে নগর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হুসাইন খবরের অন্তরাল কে বলেন, কারাগারে আসামিদের খাবারের টাকা কীভাবে নেওয়া হয়েছে এবং কীভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।

খাবারের টাকা দিলে সব ঠিক

ভুক্তভোগীরা জানান, আসামিদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত খাবারের পরিবর্তে পুলিশ সদস্যরা আসামির স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের খাবার ও নাস্তা দেয়। বলে খাবারের টাকা দিলে সব ঠিক । ১০ সেপ্টেম্বর মাদক মামলায় মো. কর্ণফুলী থানার পুলিশ নুরুজ্জামানকে আটক করে আদালতে পাঠায়। তাকে নগর কারাগারে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

খবর পেয়ে স্ত্রী পপি আক্তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। টয়লেটের সামনে তিনি খবরের অন্তরাল ডটকমকে বলেন, পুলিশকে ১০০ টাকা দিয়ে স্বামীর দুপুরের খাবারের জন্য একটি রুটি ও কিছু কলা পাঠিয়েছেন। কোন টাকা নাই

আরও পড়ুন
ডাকাতদের চিনে ফেলায় অটোরিকশা চালক খুন

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button